সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্লবতা কাকে বলে এবং আর্কিমিডিসের সূত্র খুব সহজে

  আসসালমুআলাইকুম, আজকে আমরা আলোচনা করব পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় প্লবতা নিয়ে। প্লবতা শব্দটি তোমরা হয়তো আগে শোননি। এখানে প্লবতা সম্পর্কে মাধ্যমিক স্তরের আলোচনা করা হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে পড়লে আশা করা যায় এ বিষয়ে তোমরা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। তাই আর দেরি না করে চলো জেনে নেই সম্পূর্ন বিষয়টি।

প্লবতা কি আর্কিমিডিসের সূত্র

আর্কিমিডিসের সূত্র:

প্লবতা সম্পর্কে জানার আগে আমরা আর্কিমিডিসের সূত্রটি জেনে নেব। কেননা আর্কিমিডিসের সূত্র থেকেই প্লবতার ধারণাটি এসেছে। আর্কিমিডিস বলছিলেন "কোনো বস্তু তরলে নিমজ্জিত করলে সেটি যে পরিমাণ তরল অপসারণ করে সেই পরিমাণ তরলের ওজনের সমান ওজন বস্তুটি থেকে কমে যায়"। যেমন পানিপূর্ণ একটি গ্লাসে একটি রাবার ছেড়ে দিলে রবারটির ওজন কমে যাবে। আর কতটুকু কমবে তা হলো: রাবার পানিতে ছেড়ে দেওয়ার সময় যতটুকু পানি গ্লাস থেকে পড়ে গিয়েছিল ততটুকু পানির ওজনের সমান। (বস্তুর ওজন কমে যাবে বলতে শুধু তরলেই ওজন কম মনে হবে বোঝানো হয়েছে, তরল থেকে বস্তু বের করলে আবার আগের ওজনে ফিরে যাবে)।

আরো পড়ুনঃ

কাজ সম্পর্কে সকল কিছু জেনে নাও এখানে ক্লিক করে

তরঙ্গ কি কত প্রকার অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ সব

প্লবতা কাকে বলে:

প্লবতা হচ্ছে এক ধরনের বল। কোনো বস্তুকে স্থির তরলে নিমজ্জিত করলে বা ডোবানো হলে বস্তুটি উপরের দিকে এক ধরনের বল অনুভব করে, এই উপরের দিকে অনুভব করা বলটিই হচ্ছে প্লবতা। আবার এই ঊর্ধমুখী বলের পরিমাণ হচ্ছে বস্তু দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান। যেটি আর্কিমিডিসের সূত্র নামে পরিচিত। আমরা আগেই বলেছিলাম প্লবতা পড়ার আগে আর্কিমিডিসের সূত্রটি জানতে হবে। তাই সূত্রটি ভালো করে পড়ে নাও।
যেমন তোমরা দেখে থাকবে যেসব বস্তু পানিতে ভাসে সেগুলো কিন্তু উপরের দিকে বল অনুভব করে ভেসে থাকে অর্থাৎ পানি বস্তুটিকে নিচ থেকে উপরের দিকে চাপ দিয়ে রাখে তাই বস্তুটি পানির উপরে ভেসে থাকে। এই বস্তুটা মূলত প্লবতার কারণেই ভেসে আছে! উল্লেখ্য, যেসব বস্তু ভাসে না, পানি সেগুলোকেও উপরের দিকে চাপ দিয়ে রাখে। এর মধ্যকার রহস্যটি আমরা একটু পর 'বস্তুর ভেসে থাকা ও ডুবে যাওয়া' এর মধ্যে জানব।

প্লবতা শব্দটি থেকে তোমরা কিছুটা হলেও অনুধাবন করেছ এর অর্থ কি হতে পারে! তোমরা হয়তো ভাবতে পারো "কোনো বস্তু কতুটুকু প্লাবিত হয়েছে বা ডুবে আছে তাই প্লবতা"। প্লবতার সঙ্গা ঠিক এরকম না হলেও তোমার ধারণা অনেকটাই ঠিক।
আমরা জানি কোনো বস্তুকে তরলে নিমজ্জিত করলে বস্তুটি চারদিক থেকেই বিভিন্ন মানের বল অনুভব করে। কিন্তু তোমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে প্লবতার ক্ষেত্রে শুধু বস্তু নিচের ক্ষেত্রফলে যেটুকু বল অনুভব করে তাই হিসেব করতে হবে অন্যথায় ভুল হবে।
আর্কিমিডিসের সূত্রে বলা হয়েছে বস্তু তরলে ডুবলে এর ওজন কম মনে হয়। আর বস্তুর এই ওজন কম মনে হওয়ার কারণ হলো বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল এই ঊর্ধমুখী চাপ। এই চাপের কারণে উৎপন্ন বল বস্তুর ওজনের বিপরীতে কাজ করে। সেই কারণেই বস্তুর ওজন কম মনে হয়। আর এমনটি ঘটে বস্তুর প্লবতার কারণেই।
বস্তু তরলে কতটুকু নিমজ্জিত থাকবে সেটাই হলো প্লবতার মূল আলোচ্য বিষয়।
প্লবতার ইংরেজি প্রতিশব্দ: Buoyancy.
প্লবতা F দিয়ে প্রকাশ করা হয় কেননা এটিও এক ধরনের বল।
প্লবতা F = vpg.

তরলে বস্তুর ভেসে থাকা ও ডুবে যাওয়া:

প্লবতা দিয়ে আমরা কোনো বস্তু কেনো ভেসে থাকে বা ডুবে যায় সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারব।
যে বস্তুর প্লবতা যত বেশি সেই বস্তু তত বেশি ঊর্ধমুখী বল অনুভব করে উপরের দিকে ভেসে থাকে।
যে বস্তুর প্লবতা যত কম সেই বস্তু তত কম ঊর্ধমুখী বল অনুভব করে এবং সে কারণে নিচের দিকে চলে যায়।
আবার যেহেতু প্লবতা হচ্ছে বস্তু দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান তাই বস্তুটি অপসারিত পানির ওজনের সমান বল অনুভব করে। তাহলে অপসারিত পানির ওজন বস্তু থেকে বেশি হলে বস্তুটা ভেসে থাকবে। অপসারিত পানির ওজন বস্তু থেকে কম হলে বস্তুটা ডুবে যাবে। আর অপসারিত পানির ওজন এবং বস্তুর ওজন সমান হলে বস্তুকে তরলের যেখানেই রাখা হোক না কেন সেটা সেখানেই থাকবে।

ক্ষমতা কি জেনে নাও

আশা করি তোমরা প্লবতা সম্পর্কে মূল ধারণাটি পেয়েছো। বিষয়টি আসলে অনেক সহজ। তবে অনেক শিক্ষার্থী বিষয়টিকে জটিল করে ফেলে। তোমাদের একবার পড়ে বুঝতে অসুবিধা হলে কষ্ট করে আরেকবার পড়ে নাও, সহজেই বুঝে যাবে। আর এবিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানাও। ইনশাল্লাহ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ভালো লাগল বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারো। এরকম আরো তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট পেতে ঘুরে দেখতে পারো পুরো সাইট। আজ এই পর্যন্তই। আসসালমুআলাইকুম।

আমরা ভালো থাকবো - দেশকে ভালো রাখবো

মন্তব্যসমূহ

  1. কোন বস্তু তরলে নিমজ্জিত করলে প্লাবতা বা এই উর্ধমুখি বল সৃষ্টি হওয়ার কারন কি?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. প্লবতা সৃষ্টির কারন কোন বস্তকে তরলে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করলে বস্তুটির উপরের পৃষ্ঠে বলF1 অপেক্ষা নিচের পৃষ্ঠের বল F2 বেশি হয় কারন নিচের পৃষ্ঠের গভীরতা বেশি ।ফলে নিচের পৃষ্ঠের চাপ ।তাই এখানে ঊর্ধ্বমুখী বল সৃষ্টি হয়।

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Most Popular

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি উদাহরণসহ

 খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর মাধ্যমিক শ্রেণীর বই গুলোতে একটি কমন টপিক। এই অধ্যায়ের মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ রয়েছে যেগুলো তোমাদের একটু গুরুত্ব সহকারে আত্মস্থ করতে হবে। এখানে খাদ্য ও পুষ্টি অধ্যায়ের খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় আলোচ্য বিষয়টি ভালোভাবে পড়লে তোমরা অনেক উপকৃত হবে। শুধু মাধ্যমিক নয় যে-কারোরই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে জানার আগে আমরা, ' খাদ্য কি ' এবং ' খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায় ' এই বিষয় দুটি সম্পর্কে জেনে নেব। খাদ্য কাকে বলে:   খাদ্য বলতে ঐ সমস্ত জৈব উপাদানগুলোকে বোঝায় যা দেহে শোষিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জীবের সার্বিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। আমাদের খাওয়া সকল বস্তু খাদ্য। কেননা আমরা খাই তা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেহে শক্তি সরবরাহ করে। তার পরই কেবল আমরা আমাদের সকল কাজ সকল রকম কাজ কর্ম সম্পাদন করি। খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায়: ইতোমধ্যে তোমরা আমরা জেনেছি, খাদ্য কাকে বলে। এখন এই খাদ্যও আবার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ আমরা বল...

বল কি এবং কত প্রকার সহজ ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ

জড়তাকে পরিবর্তন করতে ব্যাবহার করা হয় বল । বল প্রয়োগের মাধ্যমেই মূলত আমরা সকল কাজ কর্ম করে থাকি। আপাতত এতটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্তু একজন তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে এখানে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। যেকোনো বিষয় খুব ভালো করে সুনির্দিষ্ট ভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে, আজ আমরা বল কি সেই জিনিসটাকে জেনে নেব আরেকটু ভালো করে। Table of contents বলের সঙ্গা বলের প্রকারভেদ মহাকর্ষ বল তড়িৎ চৌম্বক বল বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল দুর্বল নিউক্লিয় বল সবল নিউক্লিয় বল বল কাকে বলেঃ যার প্রয়োগের কারণে স্থির বস্তু চলতে শুরু করে আর সমবেগে চলতে থাকা বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয় সেটাই হচ্ছে বল আসলে নিউটনের প্রথম সুত্রকেই বলের সঙ্গা বলা হয়। নিউটনের প্রথম সূত্রে তিনি জড়তা বা Inertia সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। জড়তা হলো, কোনো বস্তু যেই অবস্থায় আছে ঠিক সেই অবস্থায়ই থাকার প্রবণতা। যেমন: যদি কোনো বস্তু স্থির থাকে তাহলে ঠিক একইভাবে স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতা এক ধরনের জড়তা হতে পারে। এবং এই কথাটা গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাক...

সংকেত কাকে বলে, সংকেত লেখার নিয়ম এবং উদাহরণ

সংকেত কাকে বলে? সংকেত শব্দটি রসায়নে একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। বাস্তব জীবনে সংকেত শব্দটি আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাবহার করলেও এখানে 'সংকেত' শব্দটি রসায়নের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। সংকেতের সঙ্গা: কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অনুর সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় সংকেত। আমরা জানি, প্রতিটি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুর দ্বারা গঠিত। আর দুই বা দুইয়ের অধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গঠন করে অনু। এই অনুই হচ্ছে পদার্থের নির্দিষ্ট ধর্মের একক রূপ। রসায়ন চর্চার সময় আমরা পদার্থের ধর্মের একক রূপকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করি। যা সংকেত নামে পরিচিত। সংকেতের উদাহরণ: আমরা যদি হাইড্রোজেন গ্যাসকে রাসায়নিকভাবে প্রকাশ করতে চাই তবে হাইড্রোজেন অনুর দ্বারা প্রকাশ করতে হবে। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হাইড্রোজেন অনু গঠিত হয়। অর্থাৎ এখন হাইড্রোজেনের অনুকে আমরা এভাবে লিখতে পারি : H 2 । আর এটি যেহেতু হাইড্রোজেন অনুকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করে তাই H 2 -ই হলো হাইড্রোজেনের সংকেত। এরকম আরো কয়েকটি মৌল বা যৌগের সংকেত নিচে দেওয়া হলো: সালফিউরিক এসিডের সংকেত — H 2 SO 4 অক্সিজেন গ্যাসের সংকেত — O ...