সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শ্বসন কাকে বলে, কত প্রকার? সকল কিছু খুব সহজে

 জীববিজ্ঞানে শ্বসন এর অর্থ প্রথমবার দেখে বোঝা খানিকটা মুশকিল। যদিও অধ্যয়ন করার করার পর তা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এ সম্পর্কে অনেক বিস্তৃত পড়াশোনা রয়েছে। তাই এ বিষয়টি ভালোভাবে আত্মস্থ করা জরুরি। মাধ্যমিকের বিজ্ঞান/জীববিজ্ঞান বইগুলোতে এই শ্বসন একটি অবিচ্ছেদ্য আলোচ্য বিষয়। এ বিষয়টি একটু গুছিয়ে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

What is respiration

শ্বসনের কাকে বলে:

যে জৈবিক প্রক্রিয়া প্রাণীদেহের খাদ্যবস্তুকে অক্সিজেনের সাথে জারিত করে ব্যাবহার উপযোগী শক্তিতে রূপান্তর করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করে, তাকে শ্বসন বলে।

অর্থাৎ শ্বসনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেহের মধ্যে সঞ্চিত শক্তিকে ভেঙে রাসায়নিক শক্তি অর্থাৎ জীব দেহ ব্যাবহার করতে পারে এরূপ শক্তিতে রূপান্তর করা। এবং এ প্রক্রিয়াটি চলতে সহায়তা করে বাতাস থেকে গৃহীত অক্সিজেন। আর এ প্রক্রিয়া শেষে বলা যেতে পারে একপ্রকার বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে আসে কার্বন ডাই-অক্সাইড।

আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসকল কাজ করি তাতে কম-বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্য থেকে পাই। সূর্য থেকে পাওয়া সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদ শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। এসব খাবার আমরা গ্রহণ করি। তবে এসব জটিল খাদ্যবস্তু থেকে আমাদের দেহ সরাসরি পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এসব খাদ্যবস্তুকে অক্সিজেন দ্বারা জারিত করা এবং তা থেকে ব্যবহারযোগ্য উপাদান তৈরি করে তাকে গতিশক্তি এবং তাপশক্তিতে রূপান্তর করার নামই হলো শ্বসন।

শ্বসন প্রক্রিয়া চলাকালে প্রতিটি জীব বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। হোক জীবটি উদ্ভিদ অথবা প্রাণী। তো এখন থেকে আমরা একটি মজার বিষয় জানলাম যে, উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ছাড়াও শ্বসনের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে। তবে কিছু কিছু নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী অক্সিজেন ছাড়াই শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

স্বাভবিক তাপমাত্রায় দিনরাত 24 ঘণ্টাই শ্বসন প্রক্রিয়া চলমান থাকে। জীবের প্রতিটি সজীব কোষেই শ্বসন সম্পন্ন হতে পারে। কোষের সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকন্ড্রিয়াতে শ্বসন সম্পন্ন হয়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল যেমন: ফুল ও পাতার কুঁড়ি, অঙ্কুরিত বীজ, মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ ইত্যাদিতে শ্বসন ক্রিয়ার হার অনেক বেশি।

শ্বসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Respiration

আরো পড়োঃ

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি উদাহরণসহ

শ্বসনের প্রকারভেদ:

কিছুটা উপরে তুমি পড়েছিলে প্রায় সব জীবই শ্বসনের সময় অক্সিজেন গ্রহণ করে। কিন্তু কিছু নিম্ন শ্রেণীর জীব অক্সিজেন ছাড়াই শ্বসন কার্য সম্পাদন করে।

তাই শ্বসনের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে শ্বসনকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

  1. অবাত শ্বসন ও
  2. সবাত শ্বসন।

চলো এবার এই দুই শ্বসন সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

সবাত শ্বসন:

যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এবং শর্করা, প্রোটিন, লিপিড বা এই জাতীয় শ্বসনিক বস্তু সম্পূর্নরূপে জারিত হয়ে CO2, পানি এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে সবাত শ্বসন বলে।

যেমন: যদি 1 অনু গ্লুকোজকে 6 অনু অক্সিজেনের সাথে জারিত করা হয় তবে 6 অনু কার্বন ডাই-অক্সাইড, 6 অনু পানি এবং 686 কিলো ক্যালরি/মোল শক্তি উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ এটি সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া।

আর বেশির ভাগ জীবের শ্বসন এই প্রক্রিয়ায়-ই হয়ে থাকে। যেমন: মানুষ, গাছপালা।

অবাত শ্বসন:

যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেন ছাড়াই সংঘটিত হয়ে যায় তাকে অবাত শ্বসন বলে। এ প্রক্রিয়ায় শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের অনুপস্থিতেই আংশিকরূপে জারিত হয় এবং জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং সামান্য শক্তি উৎপন্ন করে।

ব্যাপন কাকে বলে উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ

শ্বসন পদ্ধতি:

আমাদের অনেকের মাঝে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে তারা মনে করে নাক দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়াই বুঝি শ্বসন। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি সম্পূর্নরূপে সত্য নয়। এটা শ্বসনের একটা ধাপ মাত্র। যা বহিঃশ্বসন নামে পরিচিত। শ্বসন বিষয়টি আরো বিস্তৃত। যাইহোক, শ্বসন প্রক্রিয়া দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যথা:

  1. বহিঃশ্বসন ও
  2. অন্তঃশ্বসন।

বহিঃশ্বসন:

শ্বসন প্রক্রিয়ার যে পর্যায়ে ফুসফুসে গ্যাসীয় আদান প্রদান হয় তাকে বহিঃশ্বসন বলে।

এই ধাপে ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং কৌশিক নালির মধ্যে ঘুরে শেষে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়ে আসে। অর্থাৎ এটি শ্বাস গ্রহণ ও নিঃশ্বাস নির্গত হওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

অন্তঃশ্বসন:

শ্বসন প্রক্রিয়ার এ ধাপে সঞ্চিত খাদ্যবস্তু অক্সিজেনের সাথে জারিত হয়ে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

প্রথমত শ্বসন প্রক্রিয়ায় ফুসফুসে যে শক্তি গৃহীত হয় তা কৌশিক নালিকার মাধ্যমে প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। এই অক্সিজেনের দ্বারাই কোষে সঞ্চিত খাদ্য জারিত হয় এবং আমরা শক্তি পাই।

তো আজ এই পর্যন্তই। বিষয়বস্তুটির মধ্যে কোনো জায়গায় তোমাদের বুঝতে অসুবিধা হলে অবশ্যই কমেন্টে জানতে ভুলবে না। আর শ্বসন সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাইলেও বলতে পারো। পরবর্তীতে আমরা এই পোস্টে তোমার জানতে চাওয়া বিষয়টি সংযুক্ত করে দেব।

এমনই সব তথ্য বহুল আর্টিকেল পেতে ঘুরে দেখতে পারো পুরো সাইটটি। সম্পূর্ন পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আমরা ভালো থাকবো - দেশকে ভালো রাখবো।

মন্তব্যসমূহ

Most Popular

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি উদাহরণসহ

 খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর মাধ্যমিক শ্রেণীর বই গুলোতে একটি কমন টপিক। এই অধ্যায়ের মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ রয়েছে যেগুলো তোমাদের একটু গুরুত্ব সহকারে আত্মস্থ করতে হবে। এখানে খাদ্য ও পুষ্টি অধ্যায়ের খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় আলোচ্য বিষয়টি ভালোভাবে পড়লে তোমরা অনেক উপকৃত হবে। শুধু মাধ্যমিক নয় যে-কারোরই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে জানার আগে আমরা, ' খাদ্য কি ' এবং ' খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায় ' এই বিষয় দুটি সম্পর্কে জেনে নেব। খাদ্য কাকে বলে:   খাদ্য বলতে ঐ সমস্ত জৈব উপাদানগুলোকে বোঝায় যা দেহে শোষিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জীবের সার্বিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। আমাদের খাওয়া সকল বস্তু খাদ্য। কেননা আমরা খাই তা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেহে শক্তি সরবরাহ করে। তার পরই কেবল আমরা আমাদের সকল কাজ সকল রকম কাজ কর্ম সম্পাদন করি। খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায়: ইতোমধ্যে তোমরা আমরা জেনেছি, খাদ্য কাকে বলে। এখন এই খাদ্যও আবার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ আমরা বল...

বল কি এবং কত প্রকার সহজ ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ

জড়তাকে পরিবর্তন করতে ব্যাবহার করা হয় বল । বল প্রয়োগের মাধ্যমেই মূলত আমরা সকল কাজ কর্ম করে থাকি। আপাতত এতটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্তু একজন তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে এখানে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। যেকোনো বিষয় খুব ভালো করে সুনির্দিষ্ট ভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে, আজ আমরা বল কি সেই জিনিসটাকে জেনে নেব আরেকটু ভালো করে। Table of contents বলের সঙ্গা বলের প্রকারভেদ মহাকর্ষ বল তড়িৎ চৌম্বক বল বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল দুর্বল নিউক্লিয় বল সবল নিউক্লিয় বল বল কাকে বলেঃ যার প্রয়োগের কারণে স্থির বস্তু চলতে শুরু করে আর সমবেগে চলতে থাকা বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয় সেটাই হচ্ছে বল আসলে নিউটনের প্রথম সুত্রকেই বলের সঙ্গা বলা হয়। নিউটনের প্রথম সূত্রে তিনি জড়তা বা Inertia সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। জড়তা হলো, কোনো বস্তু যেই অবস্থায় আছে ঠিক সেই অবস্থায়ই থাকার প্রবণতা। যেমন: যদি কোনো বস্তু স্থির থাকে তাহলে ঠিক একইভাবে স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতা এক ধরনের জড়তা হতে পারে। এবং এই কথাটা গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাক...

সংকেত কাকে বলে, সংকেত লেখার নিয়ম এবং উদাহরণ

সংকেত কাকে বলে? সংকেত শব্দটি রসায়নে একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। বাস্তব জীবনে সংকেত শব্দটি আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাবহার করলেও এখানে 'সংকেত' শব্দটি রসায়নের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। সংকেতের সঙ্গা: কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অনুর সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় সংকেত। আমরা জানি, প্রতিটি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুর দ্বারা গঠিত। আর দুই বা দুইয়ের অধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গঠন করে অনু। এই অনুই হচ্ছে পদার্থের নির্দিষ্ট ধর্মের একক রূপ। রসায়ন চর্চার সময় আমরা পদার্থের ধর্মের একক রূপকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করি। যা সংকেত নামে পরিচিত। সংকেতের উদাহরণ: আমরা যদি হাইড্রোজেন গ্যাসকে রাসায়নিকভাবে প্রকাশ করতে চাই তবে হাইড্রোজেন অনুর দ্বারা প্রকাশ করতে হবে। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হাইড্রোজেন অনু গঠিত হয়। অর্থাৎ এখন হাইড্রোজেনের অনুকে আমরা এভাবে লিখতে পারি : H 2 । আর এটি যেহেতু হাইড্রোজেন অনুকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করে তাই H 2 -ই হলো হাইড্রোজেনের সংকেত। এরকম আরো কয়েকটি মৌল বা যৌগের সংকেত নিচে দেওয়া হলো: সালফিউরিক এসিডের সংকেত — H 2 SO 4 অক্সিজেন গ্যাসের সংকেত — O ...