জীববিজ্ঞানে শ্বসন এর অর্থ প্রথমবার দেখে বোঝা খানিকটা মুশকিল। যদিও অধ্যয়ন করার করার পর তা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এ সম্পর্কে অনেক বিস্তৃত পড়াশোনা রয়েছে। তাই এ বিষয়টি ভালোভাবে আত্মস্থ করা জরুরি। মাধ্যমিকের বিজ্ঞান/জীববিজ্ঞান বইগুলোতে এই শ্বসন একটি অবিচ্ছেদ্য আলোচ্য বিষয়। এ বিষয়টি একটু গুছিয়ে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শ্বসনের কাকে বলে:
যে জৈবিক প্রক্রিয়া প্রাণীদেহের খাদ্যবস্তুকে অক্সিজেনের সাথে জারিত করে ব্যাবহার উপযোগী শক্তিতে রূপান্তর করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করে, তাকে শ্বসন বলে।
অর্থাৎ শ্বসনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেহের মধ্যে সঞ্চিত শক্তিকে ভেঙে রাসায়নিক শক্তি অর্থাৎ জীব দেহ ব্যাবহার করতে পারে এরূপ শক্তিতে রূপান্তর করা। এবং এ প্রক্রিয়াটি চলতে সহায়তা করে বাতাস থেকে গৃহীত অক্সিজেন। আর এ প্রক্রিয়া শেষে বলা যেতে পারে একপ্রকার বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে আসে কার্বন ডাই-অক্সাইড।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসকল কাজ করি তাতে কম-বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্য থেকে পাই। সূর্য থেকে পাওয়া সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদ শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। এসব খাবার আমরা গ্রহণ করি। তবে এসব জটিল খাদ্যবস্তু থেকে আমাদের দেহ সরাসরি পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এসব খাদ্যবস্তুকে অক্সিজেন দ্বারা জারিত করা এবং তা থেকে ব্যবহারযোগ্য উপাদান তৈরি করে তাকে গতিশক্তি এবং তাপশক্তিতে রূপান্তর করার নামই হলো শ্বসন।
শ্বসন প্রক্রিয়া চলাকালে প্রতিটি জীব বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। হোক জীবটি উদ্ভিদ অথবা প্রাণী। তো এখন থেকে আমরা একটি মজার বিষয় জানলাম যে, উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ছাড়াও শ্বসনের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে। তবে কিছু কিছু নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী অক্সিজেন ছাড়াই শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
স্বাভবিক তাপমাত্রায় দিনরাত 24 ঘণ্টাই শ্বসন প্রক্রিয়া চলমান থাকে। জীবের প্রতিটি সজীব কোষেই শ্বসন সম্পন্ন হতে পারে। কোষের সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকন্ড্রিয়াতে শ্বসন সম্পন্ন হয়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল যেমন: ফুল ও পাতার কুঁড়ি, অঙ্কুরিত বীজ, মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ ইত্যাদিতে শ্বসন ক্রিয়ার হার অনেক বেশি।
শ্বসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Respiration
আরো পড়োঃ
খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি উদাহরণসহ
শ্বসনের প্রকারভেদ:
কিছুটা উপরে তুমি পড়েছিলে প্রায় সব জীবই শ্বসনের সময় অক্সিজেন গ্রহণ করে। কিন্তু কিছু নিম্ন শ্রেণীর জীব অক্সিজেন ছাড়াই শ্বসন কার্য সম্পাদন করে।
তাই শ্বসনের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে শ্বসনকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
- অবাত শ্বসন ও
- সবাত শ্বসন।
চলো এবার এই দুই শ্বসন সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
সবাত শ্বসন:
যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এবং শর্করা, প্রোটিন, লিপিড বা এই জাতীয় শ্বসনিক বস্তু সম্পূর্নরূপে জারিত হয়ে CO2, পানি এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে সবাত শ্বসন বলে।
যেমন: যদি 1 অনু গ্লুকোজকে 6 অনু অক্সিজেনের সাথে জারিত করা হয় তবে 6 অনু কার্বন ডাই-অক্সাইড, 6 অনু পানি এবং 686 কিলো ক্যালরি/মোল শক্তি উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ এটি সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া।
আর বেশির ভাগ জীবের শ্বসন এই প্রক্রিয়ায়-ই হয়ে থাকে। যেমন: মানুষ, গাছপালা।
অবাত শ্বসন:
যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেন ছাড়াই সংঘটিত হয়ে যায় তাকে অবাত শ্বসন বলে। এ প্রক্রিয়ায় শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের অনুপস্থিতেই আংশিকরূপে জারিত হয় এবং জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং সামান্য শক্তি উৎপন্ন করে।
ব্যাপন কাকে বলে উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ
শ্বসন পদ্ধতি:
আমাদের অনেকের মাঝে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে তারা মনে করে নাক দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়াই বুঝি শ্বসন। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি সম্পূর্নরূপে সত্য নয়। এটা শ্বসনের একটা ধাপ মাত্র। যা বহিঃশ্বসন নামে পরিচিত। শ্বসন বিষয়টি আরো বিস্তৃত। যাইহোক, শ্বসন প্রক্রিয়া দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যথা:
- বহিঃশ্বসন ও
- অন্তঃশ্বসন।
বহিঃশ্বসন:
শ্বসন প্রক্রিয়ার যে পর্যায়ে ফুসফুসে গ্যাসীয় আদান প্রদান হয় তাকে বহিঃশ্বসন বলে।
এই ধাপে ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং কৌশিক নালির মধ্যে ঘুরে শেষে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়ে আসে। অর্থাৎ এটি শ্বাস গ্রহণ ও নিঃশ্বাস নির্গত হওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
অন্তঃশ্বসন:
শ্বসন প্রক্রিয়ার এ ধাপে সঞ্চিত খাদ্যবস্তু অক্সিজেনের সাথে জারিত হয়ে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
প্রথমত শ্বসন প্রক্রিয়ায় ফুসফুসে যে শক্তি গৃহীত হয় তা কৌশিক নালিকার মাধ্যমে প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। এই অক্সিজেনের দ্বারাই কোষে সঞ্চিত খাদ্য জারিত হয় এবং আমরা শক্তি পাই।
তো আজ এই পর্যন্তই। বিষয়বস্তুটির মধ্যে কোনো জায়গায় তোমাদের বুঝতে অসুবিধা হলে অবশ্যই কমেন্টে জানতে ভুলবে না। আর শ্বসন সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাইলেও বলতে পারো। পরবর্তীতে আমরা এই পোস্টে তোমার জানতে চাওয়া বিষয়টি সংযুক্ত করে দেব।
এমনই সব তথ্য বহুল আর্টিকেল পেতে ঘুরে দেখতে পারো পুরো সাইটটি। সম্পূর্ন পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমরা ভালো থাকবো - দেশকে ভালো রাখবো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন