সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাজ কি? কাজের একক, মাত্রা, প্রকারভেদ এবং সূত্র

 কাজ কি?

এই প্রশ্নটি নির্বাচন করা হয়েছে এসএসসি পদার্থ বিজ্ঞান বই থেকে। তাই কাজ কি এই টপিকটি সম্পর্কে এখানে আমরা যা তুলে ধরেছি তার সবই পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে।

কাজের সংজ্ঞা: কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে বস্তুর সরণ ঘটানোকেই কাজ বলে। অর্থাৎ প্রথমত বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করতে হবে এবং এরপর যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর সরণ হয় তবে সেখানে কাজ সম্পন্ন হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তুমি যদি একটা ফুটবলকে লাথি দাও এবং এরপর যদি ফুটবলটা তোমার লাথির কারণে কিছুটা অগ্রসর হয় তবে তুমি কাজ করেছ। কারণ প্রথমত তুমি লাথির মাধ্যমে ফুটবলটার ওপর বল প্রয়োগ করলে এবং সেই বলের কারণে ফুটবলটা তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। অর্থাৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।


আবার এই একই লাথি যদি তুমি কোন দেয়ালে গিয়ে মারো এবং দেওয়ালের যদি অবস্থানের পরিবর্তন না হয় তবে সেখানে কিন্তু কোন কাজ সম্পন্ন হয়নি।

কাজ কি, what is work in physics

অর্থাৎ মূল কথা হচ্ছে কাজ সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই বল প্রয়োগ করতে হবে এবং সরণ ঘটতে হবে। এ দুটির কোনটির একটি অনুপস্থিত থাকলে কাজ সম্পন্ন হয় না। যদিও এসব শর্ত দৈনন্দিন জীবনে কাউকে দিলে সে তা মানবে না।

আরো পড়োঃ

ক্ষমতা কি, ক্ষমতার একক, মাত্রা, উদাহরণ এবং সূত্র

বল কি এবং কত প্রকার সহজ ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ

কাজের সূত্র: আমাদের এটুকু আলোচনা থেকে কাজের জন্য আমরা একটি চমকপ্রদ সূত্র বানিয়ে ফেলতে পারি।

কাজ= বল × সরণ 

ধরি, আমরা F বল প্রয়োগ করে কোন একটা বস্তুকে s দূরত্বে নিয়ে গিয়েছি। তাহলে কাজের পরিমাণ W=Fs

উদাহরণ: যদি আমরা 10N বল প্রয়োগ করে বস্তুটিকে 5m দূরত্বে নিয়ে যাই, তাহলে কাজের পরিমাণ W= 10×5

                              =50J

আবার বল যদি না দেওয়া থাকে তাহলে যেহেতু F=ma সে ক্ষেত্রে আমরা লিখতে পারি W=Fs

   =mas

এবং এই বলটি যদি অভিকর্ষ বলের দিক বা বিপরীতে হয় তাহলে আনুভূমিক ত্বরণ a এর পরিবর্তে অভিকর্ষজ ত্বরণ g এবং সরণ s এর বদলে উচ্চতা h লিখতেই পারি। তাহলে সূত্র দাড়ায় ,W=mas

                 =mgh

কাজের এসআই একক জুল(j)

এখন আমরা কাজের মাত্রা টি বের করতে পারি,

আমরা জানি,

m বা ভরের মাত্রা M

a বা ত্বরণের মাত্রা LT-²

s বা সরণের মাত্রা L

অতএব, W=mas

                 =MLT-²L

                 =ML²T-²

অতএব, কাজের মাত্রা [W]=[ML²T-²]

কাজের প্রকারভেদ: কাজ শব্দটা দৈনন্দিন কথাবার্তায় আমরা যেভাবেই ব্যবহার করি না কেন, পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এর সুনির্দিষ্ট অর্থ নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি।

পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় কাজ দুই প্রকার।যথা:

  1. ধনাত্মক কাজ ও
  2. ঋণাত্মক কাজ।

ধনাত্মক কাজ: কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে যদি বস্তুটির সরণ বলের দিকে হয় তবে তাকে ধনাত্মক কাজ বলে।

যেমন একটি পাথর ধরে উপরে উঠলে সেটি ধনাত্মক কাজ হয়। কেননা পাথরটিতে উপরের দিকে বল প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তা উপরের দিকে উঠেছে। 

আরো পড়ুন

তরঙ্গ কি, কত প্রকার, অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ তরঙ্গ সম্পর্কে সকল কিছু

ঋণাত্মক কাজ: কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে যদি বস্তুটির সরণ বলের বিপরীত দিকে হয় তবে তাকে ঋণাত্মক কাজ বলে।

যেমন: গতিশীল একটা সাইকেল তোমার দিকে ছুটে আসলে তুমি বল প্রয়োগ করে সাইকেলটাকে থামানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও যদি সাইকেলটা তোমাকে সহ পেছনে ঠেলে নিয়ে যায়, তবে সেখানে ঋণাত্মক কাজ করা হয়। কেননা তুমি তোমার সামনের দিকে বলপ্রয়োগ করেছ কিন্তু তোমার সরণ হয়েছে বিপরীত দিকে। এ ক্ষেত্রে কাজের সূত্রটি এমন হতে পারে W=F×(–s)

                    =–Fs

আশা করি এই আর্টিকেলটা তোমার উপকারে এসেছে। এখান থেকে তোমার বন্ধুও যেন কিছু জানতে পারে তার জন্য পোস্টটা শেয়ার করতে পারো।

এছাড়া এই কাজ সম্পর্কিত তোমার আর যেকোনো সমস্যা থাকলে কমেন্টে জানাতে পারো।

মন্তব্যসমূহ

Most Popular

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি উদাহরণসহ

 খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর মাধ্যমিক শ্রেণীর বই গুলোতে একটি কমন টপিক। এই অধ্যায়ের মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ রয়েছে যেগুলো তোমাদের একটু গুরুত্ব সহকারে আত্মস্থ করতে হবে। এখানে খাদ্য ও পুষ্টি অধ্যায়ের খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় আলোচ্য বিষয়টি ভালোভাবে পড়লে তোমরা অনেক উপকৃত হবে। শুধু মাধ্যমিক নয় যে-কারোরই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে জানার আগে আমরা, ' খাদ্য কি ' এবং ' খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায় ' এই বিষয় দুটি সম্পর্কে জেনে নেব। খাদ্য কাকে বলে:   খাদ্য বলতে ঐ সমস্ত জৈব উপাদানগুলোকে বোঝায় যা দেহে শোষিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জীবের সার্বিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। আমাদের খাওয়া সকল বস্তু খাদ্য। কেননা আমরা খাই তা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেহে শক্তি সরবরাহ করে। তার পরই কেবল আমরা আমাদের সকল কাজ সকল রকম কাজ কর্ম সম্পাদন করি। খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায়: ইতোমধ্যে তোমরা আমরা জেনেছি, খাদ্য কাকে বলে। এখন এই খাদ্যও আবার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ আমরা বল...

বল কি এবং কত প্রকার সহজ ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ

জড়তাকে পরিবর্তন করতে ব্যাবহার করা হয় বল । বল প্রয়োগের মাধ্যমেই মূলত আমরা সকল কাজ কর্ম করে থাকি। আপাতত এতটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্তু একজন তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে এখানে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। যেকোনো বিষয় খুব ভালো করে সুনির্দিষ্ট ভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে, আজ আমরা বল কি সেই জিনিসটাকে জেনে নেব আরেকটু ভালো করে। Table of contents বলের সঙ্গা বলের প্রকারভেদ মহাকর্ষ বল তড়িৎ চৌম্বক বল বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল দুর্বল নিউক্লিয় বল সবল নিউক্লিয় বল বল কাকে বলেঃ যার প্রয়োগের কারণে স্থির বস্তু চলতে শুরু করে আর সমবেগে চলতে থাকা বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয় সেটাই হচ্ছে বল আসলে নিউটনের প্রথম সুত্রকেই বলের সঙ্গা বলা হয়। নিউটনের প্রথম সূত্রে তিনি জড়তা বা Inertia সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। জড়তা হলো, কোনো বস্তু যেই অবস্থায় আছে ঠিক সেই অবস্থায়ই থাকার প্রবণতা। যেমন: যদি কোনো বস্তু স্থির থাকে তাহলে ঠিক একইভাবে স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতা এক ধরনের জড়তা হতে পারে। এবং এই কথাটা গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাক...

সংকেত কাকে বলে, সংকেত লেখার নিয়ম এবং উদাহরণ

সংকেত কাকে বলে? সংকেত শব্দটি রসায়নে একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। বাস্তব জীবনে সংকেত শব্দটি আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাবহার করলেও এখানে 'সংকেত' শব্দটি রসায়নের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। সংকেতের সঙ্গা: কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অনুর সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় সংকেত। আমরা জানি, প্রতিটি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুর দ্বারা গঠিত। আর দুই বা দুইয়ের অধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গঠন করে অনু। এই অনুই হচ্ছে পদার্থের নির্দিষ্ট ধর্মের একক রূপ। রসায়ন চর্চার সময় আমরা পদার্থের ধর্মের একক রূপকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করি। যা সংকেত নামে পরিচিত। সংকেতের উদাহরণ: আমরা যদি হাইড্রোজেন গ্যাসকে রাসায়নিকভাবে প্রকাশ করতে চাই তবে হাইড্রোজেন অনুর দ্বারা প্রকাশ করতে হবে। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হাইড্রোজেন অনু গঠিত হয়। অর্থাৎ এখন হাইড্রোজেনের অনুকে আমরা এভাবে লিখতে পারি : H 2 । আর এটি যেহেতু হাইড্রোজেন অনুকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করে তাই H 2 -ই হলো হাইড্রোজেনের সংকেত। এরকম আরো কয়েকটি মৌল বা যৌগের সংকেত নিচে দেওয়া হলো: সালফিউরিক এসিডের সংকেত — H 2 SO 4 অক্সিজেন গ্যাসের সংকেত — O ...