সংকেত কাকে বলে?
সংকেত শব্দটি রসায়নে একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ বহন করে। বাস্তব জীবনে সংকেত শব্দটি আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাবহার করলেও এখানে 'সংকেত' শব্দটি রসায়নের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে।
সংকেতের সঙ্গা:
কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অনুর সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় সংকেত।আমরা জানি, প্রতিটি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুর দ্বারা গঠিত। আর দুই বা দুইয়ের অধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গঠন করে অনু। এই অনুই হচ্ছে পদার্থের নির্দিষ্ট ধর্মের একক রূপ। রসায়ন চর্চার সময় আমরা পদার্থের ধর্মের একক রূপকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করি। যা সংকেত নামে পরিচিত।
সংকেতের উদাহরণ:
আমরা যদি হাইড্রোজেন গ্যাসকে রাসায়নিকভাবে প্রকাশ করতে চাই তবে হাইড্রোজেন অনুর দ্বারা প্রকাশ করতে হবে। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হাইড্রোজেন অনু গঠিত হয়। অর্থাৎ এখন হাইড্রোজেনের অনুকে আমরা এভাবে লিখতে পারি : H2 । আর এটি যেহেতু হাইড্রোজেন অনুকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করে তাই H2 -ই হলো হাইড্রোজেনের সংকেত।এরকম আরো কয়েকটি মৌল বা যৌগের সংকেত নিচে দেওয়া হলো:
- সালফিউরিক এসিডের সংকেত — H2SO4
- অক্সিজেন গ্যাসের সংকেত — O2
- খাবার লবণের সংকেত — NaCl
- সিলভার নাইট্রেটের সংকেত — AgNO3
- চুনের সংকেত — CaO
- কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংকেত — CO2
- পানির সংকেত — H2O
- ক্লোরিন গ্যাসের সংকেত — Cl2
- ওজনের সংকেত — O3
ব্যাতিক্রমধর্মী সংকেত:
উপরের উদাহরণগুলোতে আমরা দেখেছি মৌলের সংকেত দুই বা ততোধিক একই পরমাণু নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ব্যাতিক্রমধর্মী এমন সংকেতও রয়েছে যেখানে মৌলটি একটি মাত্র পরমাণু নিয়ে গঠিত হয়ে তার সংকেত প্রকাশ করে। যেমন: নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামের সংকেত শুধুমাত্র He. কারণ এটি স্থিতিশীল একটি মৌল এবং এটি পরিবেশে মুক্তভাবেও বিরাজ করতে পারে।সংকেত লেখার নিয়ম:
মৌলের রাসায়নিক সংকেত লেখার নিয়ম:
মৌলের সংকেত লেখা খুবই সহজ।- কোনো মৌলের অণুতে যে পরমাণু বিদ্যমান তার প্রতীক লিখতে হবে।
- অণুতে বিদ্যমান পরমাণু কতটি আছে সেই সংখ্যাটি ইংরেজিতে প্রতীকের ডান পাশের নিচে ছোট করে লিখতে হবে।
যেমন: যদি আমরা ক্লোরিন গ্যাসের সংকেত লিখতে চাই তবে এভাবে নির্ণয় করতে পারি। ১. ক্লোরিন গ্যাসে ক্লোরিন পরমাণু বিদ্যমান, ক্লোরিন পরমাণুর প্রতীক — Cl. ২. এবং ক্লোরিন গ্যাসের একটি অণুতে দুটি পরমাণু থাকে, তাই প্রতীকের ডানপাশে ছোট করে লিখব-2 => Cl2
আরো পড়ো
পর্যায় সারণী কাকে বলে এবং এর ইতিহাস
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এর ব্যবহার
যৌগের সংকেত লেখার নিয়ম:
যৌগের রাসায়নিক সংকেত লেখার নিয়মগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:- যৌগের অণুতে বিদ্যমান পরমাণু গুলোর প্রতীক পাশাপাশি লিখতে হবে।
- পরমাণু সমূহের যোজনী স্থান বিনিময় করে লিখতে হবে অর্থাৎ প্রথম মৌলের যোজনী দ্বিতীয় মৌলের ডান পাশে এবং দ্বিতীয় মৌলের যোজনী প্রথম মৌলের ডান পাশে নিচে ছোট করে লিখতে হয়।
উল্লেখ্য, যৌগে যৌগমূলক থাকলে, যৌগমূলকে বন্ধনী ব্যাবহার করে তারপর যোজনী স্থান বিনিময় করে লিখতে হয়। যেমন: Mg(PO4)2
3. পরমাণু সমূহের যোজনী কোনো সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হলে তাদেরকে ওই সাধারণ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে ভাগফলগুলো যোজনীর মতো স্থান বিনিময় করে লিখতে হয়।
যেমন: কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুতে যে কার্বন ও অক্সিজেন পরমাণু থাকে, তাদের যোজনী যথাক্রমে 4 ও 2। সংখ্যাটিকে সাধারণ সংখ্যা 2 দিয়ে ভাগ দিলে পাওয়া যায় যথাক্রমে 2 ও 1. এ ভাগফলকে সংকেতে লিখলে হয়: C1O2 -- CO2
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন