সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পর্যায় সারণী কাকে বলে এবং এর ইতিহাস

 পর্যায় সারণিকে রসায়নের প্রাণ বলা হয়। রসায়ন চর্চার প্রথম ও পূর্ব শর্ত হলো একদম সুনির্দিষ্টভাবে পর্যায় সারণি সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান রাখা। তাই রসায়নের এই মূল বিষয়টি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়লে তুমি অনেক উপকৃত হবে।

What is periodic table

পর্যায় সারণীর ইতিহাসঃ

আমরা বর্তমানে যেই পর্যায় সারণীটি দেখি তা হটাৎ করেই এমন রূপ লাভ করে নি। আধুনিক এই পর্যায় সারণীর পেছনে নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন বিজ্ঞানীরা। পর্যায় সারণী নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয় রসায়নের জনক অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ের হাত ধরে।
১৭৮৯ সালে এই ল্যাভয়সিয়েই কয়েকটি মৌলিক পদার্থ যেমনঃ হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস, সালফার, দস্তা বা এরকম বেশ কয়েকটি পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেন। এবং তাদেরকে ধাতু এবং অধাতু এ দু'টি ভাগে ভাগ করেন। আর এটিই হলো পর্যায় সারণীর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য যে বিভিন্ন মৌলকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা।
এরপর পর্যায় সারণীর ধারণার বিকাশে কাজ করেছিলেন বিজ্ঞানী ডোবেরাইনার। ১৮২৯ সালে তিনি গবেষণা করে দেখেছিলেন যে পরপর তিনটি মৌলিক পদার্থ প্রায় একই রকমের ধর্ম প্রদর্শন করে। তাই তিনি এই তিনটি মৌলকে পর্যায় সারণিতে পরপর সাজানোর চেষ্টা করেন। আর পরপর তিনটি মৌল একই রকম বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে এই সূত্রটি তখন ডোবেরাইনারের ত্রয়ী সূত্র নামে পরিচিত হয়ে যায়। ডোবেরাইনার ক্লোরিন, ব্রোমিন এবং আয়োডিন এই তিনটি মৌল নিয়ে গবেষণা করে ত্রয়ী সূত্র প্রদান করেন।
এরপর বিজ্ঞানী নিউল্যান্ড ১৮৬৪ সালে আবার প্রমাণ করেন "কোনো মৌলকে পারমাণবিক ভর অনুযায়ী সাজালে মৌলটির ধর্মের সাথে তার অষ্টম মৌলের পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য মিলে যায়"। এবং এখন থেকে ধারণা নেওয়া হয় একটি মৌলকে লিখলে তার পরবর্তী অষ্টম তম মৌল একই ধর্মের হতে হবে।
১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ পূর্ববর্তী সময়ে আবিষ্কৃত মৌলের সকল ধর্ম থেকে আরেকটি সূত্র প্রদান করেন। ফলে তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৬৩ টি মৌল ৮ টি খাড়া কলাম এবং ১২ টি অনুভূমিক সারির মাধ্যমে ঐসকল মৌলকে সাজিয়ে রাখেন। এবং এই সাজানো ছকটির নাম দেন পর্যায় সারণী।
অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ের ৩৩ টি মৌলের ছককে মেন্ডেলিফ রূপান্তর করেন ৬৩ টি মৌলের ছকে। সর্বশেষ ২০১২ সালে আবিষ্কৃত ১১৮ টি মৌল নিয়ে ওই সারণীটি নতুন রূপ লাভ করে এবং সেটাই আধুনিক পর্যায় সারণী হিসেবে রসায়নের পাতায় স্থান করে আছে।

পর্যায় সারণী কাকে বলেঃ

আবিষ্কৃত মৌল সমূহকে তাদের ধর্ম, বৈশিষ্ট্য ও ইলেকট্রন বিন্যাস অনুযায়ী সাজানোর জন্য যে ছক ব্যাবহার করা হয়েছে তাকে পর্যায় সারণী বলে।

মৌলিক পদার্থ সমুহ একত্র করে উপস্থাপন করা হয় এরকম ছকটির নামই হলো পর্যায় সারণী। পর্যায় সারণী কতগুলো কলাম ও সারি নিয়ে গঠিত হয়। যার প্রতিটি ঘরে থাকে আলাদা আলাদা মৌল।
পর্যায় সারণিতে রয়েছে সুনির্দিষ্ট ১১৮ টি মৌল। সেই সাথে প্রতিটি মৌলের বিভিন্ন প্রকারের বৈশিষ্ট্য। যেমন প্রতিটি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা, ভরসংখ্যা এবং প্রতিটি মৌলের গ্রুপ ও পর্যায়।

আরো পড়ো

সংকেত কাকে বলে, সংকেত লেখার নিয়ম এবং উদাহরণ

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এর ব্যবহার

আধুনিক পর্যায় সারণীর ছবিটি নিচে দেওয়া হলোঃ

পর্যায় সারণীর ছবি

ক্রেডিটঃ NCTB(দশম শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকে সংকলিত)
ছবিটি হাই রেজোলিউশনে দেখতে এখানে ক্লিক করো

পর্যায় সারণীতে গ্রুপ এবং পর্যায় কিঃ

পর্যায় সারণীর আকার মূলত ছক আকৃতির। যদিও সাধারণ অন্য ছকের চেয়ে আলাদা। যাহোক সাধারণত আমরা এক্সেল দিয়ে যে স্প্রেডশীট তৈরি করি সেখানে সারি এবং কলাম বলে একটা কথা থাকে। পর্যায় সারণীতেও এরকমই কলাম এবং সারি রয়েছে। পর্যায় সারণীর কলাম গুলোকে অর্থাৎ খাড়া ঘরগুলোকে গ্রুপ বা শ্রেণী বলা হয়। আর অনুভূমিক সারি গুলোকে বলা হয় পর্যায়। একদম সহজ..!! আর এইসব গ্রুপ এবং পর্যায় থেকেই তৈরি হয়েছে সম্পূর্ন সারণী। ১১৮ টি মৌল এটে যায় কলাম আর সারি দিয়ে তৈরি বর্গাকার ঘরে।

আধুনিক পর্যায় সারণিতে কয়টি পর্যায় এবং শ্রেণি আছেঃ

  • পর্যায় সারণীতে ৭ টি পর্যায় অনুভূমিক সারি রয়েছে।
  • পর্যায় সারণীতে ১৮ টি গ্রুপ বা খাড়া স্তম্ভ রয়েছে।

আমরা জানি ২০১২ সাল পর্যন্ত ১১৮ টি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। এবং অবশ্যই প্রত্যেকটি মৌলের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে এসব আলাদা আলাদা গ্রুপ এবং পর্যায়ে ভাগ করার ফলে পর্যায় সারণীর অনেক তথ্য সহজে মনে রাখা সম্ভব হচ্ছে। কেননা একই গ্রুপ বা পর্যায়ের মৌলগুলোর ধর্মের সাদৃশ্য রয়েছে।
পর্যায় সারণি pdf পেতে এখানে ক্লিক করো এখানে পর্যায় সারণী সম্পর্কে সকল পড়া পেয়ে যাবে।

আমাদের পোস্টটি ছিল পর্যায় সারণী সঙ্গা সম্পর্কে এবং পর্যায় সারণীর পটভূমি সম্পর্কে আপাতত এই দুটি বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। তবে তোমারা আর যেই টপিকটি সম্পর্কে জানতে চাও সেটি কমেন্ট করে জনাও, তাহলে ঐ টপিকটি এখানে সঙ্গুক্ত করে দিব এবং তোমাদের জানিয়ে দিব। আর পোস্টের কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলেও কমেন্টে লিখে জানাও তাহলেও সেটির উত্তরও আশাকরি পেয়ে যাবে। এরকম আরও তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট পেতে ঘুরে দেখতে পারো পুরো সাইট। ধন্যবাদ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।

আমরা ভালো থাকবো - দেশকে ভালো রাখবো

মন্তব্যসমূহ

Most Popular

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি উদাহরণসহ

 খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর মাধ্যমিক শ্রেণীর বই গুলোতে একটি কমন টপিক। এই অধ্যায়ের মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ রয়েছে যেগুলো তোমাদের একটু গুরুত্ব সহকারে আত্মস্থ করতে হবে। এখানে খাদ্য ও পুষ্টি অধ্যায়ের খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় আলোচ্য বিষয়টি ভালোভাবে পড়লে তোমরা অনেক উপকৃত হবে। শুধু মাধ্যমিক নয় যে-কারোরই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে জানার আগে আমরা, ' খাদ্য কি ' এবং ' খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায় ' এই বিষয় দুটি সম্পর্কে জেনে নেব। খাদ্য কাকে বলে:   খাদ্য বলতে ঐ সমস্ত জৈব উপাদানগুলোকে বোঝায় যা দেহে শোষিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জীবের সার্বিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। আমাদের খাওয়া সকল বস্তু খাদ্য। কেননা আমরা খাই তা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেহে শক্তি সরবরাহ করে। তার পরই কেবল আমরা আমাদের সকল কাজ সকল রকম কাজ কর্ম সম্পাদন করি। খাদ্যের উপাদান বলতে কী বোঝায়: ইতোমধ্যে তোমরা আমরা জেনেছি, খাদ্য কাকে বলে। এখন এই খাদ্যও আবার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ আমরা বল...

বল কি এবং কত প্রকার সহজ ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ এক্সক্লুসিভ

জড়তাকে পরিবর্তন করতে ব্যাবহার করা হয় বল । বল প্রয়োগের মাধ্যমেই মূলত আমরা সকল কাজ কর্ম করে থাকি। আপাতত এতটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্তু একজন তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে এখানে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। যেকোনো বিষয় খুব ভালো করে সুনির্দিষ্ট ভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে, আজ আমরা বল কি সেই জিনিসটাকে জেনে নেব আরেকটু ভালো করে। Table of contents বলের সঙ্গা বলের প্রকারভেদ মহাকর্ষ বল তড়িৎ চৌম্বক বল বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল দুর্বল নিউক্লিয় বল সবল নিউক্লিয় বল বল কাকে বলেঃ যার প্রয়োগের কারণে স্থির বস্তু চলতে শুরু করে আর সমবেগে চলতে থাকা বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয় সেটাই হচ্ছে বল আসলে নিউটনের প্রথম সুত্রকেই বলের সঙ্গা বলা হয়। নিউটনের প্রথম সূত্রে তিনি জড়তা বা Inertia সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। জড়তা হলো, কোনো বস্তু যেই অবস্থায় আছে ঠিক সেই অবস্থায়ই থাকার প্রবণতা। যেমন: যদি কোনো বস্তু স্থির থাকে তাহলে ঠিক একইভাবে স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতা এক ধরনের জড়তা হতে পারে। এবং এই কথাটা গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাক...

কাজ কি? কাজের একক, মাত্রা, প্রকারভেদ এবং সূত্র

 কাজ কি? এই প্রশ্নটি নির্বাচন করা হয়েছে এসএসসি পদার্থ বিজ্ঞান বই থেকে। তাই কাজ কি এই টপিকটি সম্পর্কে এখানে আমরা যা তুলে ধরেছি তার সবই পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। কাজের সংজ্ঞা: কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে বস্তুর সরণ ঘটানোকেই কাজ বলে। অর্থাৎ প্রথমত বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করতে হবে এবং এরপর যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর সরণ হয় তবে সেখানে কাজ সম্পন্ন হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তুমি যদি একটা ফুটবলকে লাথি দাও এবং এরপর যদি ফুটবলটা তোমার লাথির কারণে কিছুটা অগ্রসর হয় তবে তুমি কাজ করেছ। কারণ প্রথমত তুমি লাথির মাধ্যমে ফুটবলটার ওপর বল প্রয়োগ করলে এবং সেই বলের কারণে ফুটবলটা তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। অর্থাৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আবার এই একই লাথি যদি তুমি কোন দেয়ালে গিয়ে মারো এবং দেওয়ালের যদি অবস্থানের পরিবর্তন না হয় তবে সেখানে কিন্তু কোন কাজ সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ মূল কথা হচ্ছে কাজ সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই বল প্রয়োগ করতে হবে এবং সরণ ঘটতে হবে। এ দুটির কোনটির একটি অনুপস্থিত থাকলে কাজ সম্পন্ন হয় না। যদিও এসব শর্ত দৈনন্দিন জীবনে কাউকে দিলে সে তা মানবে না। আরো পড়োঃ ক্ষমতা কি, ক্ষমতার এক...