আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানবো ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মূল বিষয়টি শুরু করার আগে ডিজিটাল শব্দটির অর্থ আমরা জেনে নেব। তো পোস্ট বড় না করে চলো আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু শুরু করা যাক।
ডিজিটাল শব্দের অর্থ:
ডিজিট এর দ্বারা গঠিত একটি অর্থপূর্ণ কমান্ড কে ডিজিটাল কমান্ড বলা হয়। ডিজিট বলতে এক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যা বা অন্যান্যকে বোঝায়। ডিজিটাল শব্দটি একটি বিশেষণ জাতীয় শব্দ। অর্থাৎ 'কোনো কিছু' ডিজিটের মাধ্যেমে সম্পন্ন হলে, সেই 'কোনো কিছুকেই' ডিজিটাল ধরা হয়।
যেমন: একটি পিকচার আমরা যেভাবে দেখি আমাদের ডিভাইসে আসলে সেভাবে থাকে না। পিকচারটি সংরক্ষিত থাকে বিভিন্ন রকম কোড বা বাইনারি সংখ্যা দিয়ে। আর যেহেতু পিকচার এই ধরনের ডিজিট দিয়ে লেখা থাকে, তাই বলা যায়, পিকচার এক ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট।
আবার রোবট একটি ডিজিটাল প্রযুক্তি, কেননা রোবটকে কমান্ডগুলো ডিজিটের মাধ্যমেই দেওয়া হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কি বোঝায়:
ডিজিটাল এর সঙ্গা দেখে তোমরা বলতে পারো, ডিজিটাল বাংলাদেশ = ডিজিট এর দ্বারা গঠিত বাংলাদেশ..!!🥴😬 কিন্তু আসলে সেরকম নয়। একটি দেশকে ডিজিটাল বলা হয় যখন দেশটির সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্বারা সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রম (যেমন: শিক্ষা ব্যাবস্থা, চিকিৎসা, সরকার পরিচালনা ইত্যাদি) যদি ডিজিট দ্বারা পরিচালিত হয় এরকম যন্ত্রের বা এরকম মাধ্যমের প্রযুক্তি দিয়ে সম্পন্ন হয় তবে বাংলাদেশকেও একটি ডিজিটাল দেশ বলা যেতেই পারে।
বাংলাদেশের সকল কার্যক্রম কি ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে?- এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব পুরো আর্টিকেল জুড়ে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পটভূমি:
ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি প্রথম শোনা গিয়েছিল ২০০৮ সালে। তোমরা জানো ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী-লীগের একটি নির্বাচনী ইশতহার প্রকাশ করা হয়। এবং সেখানে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশকে ডিজিটাল রূপে গড়ে তুলবেন। ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরই ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এবং এরই মধ্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপ নিয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য:
ডিজিটাল বাংলাদেশের বহুমুখী লক্ষ্য ছিল। প্রথমত ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের জীবনমান উন্নততর করা। একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যাবস্থা অর্থাৎ সব মিলিয়ে একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক দেশ উপহার দেওয়াই ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের কাজকর্মকে আগের চেয়ে সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী করাও ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখলেন যারা:
স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু তা বাস্তবে রূপ দেওয়া কঠিন। তবে সেই অসাধ্যকে সাধন করেছেন দেশের কয়েকজন কারিগর। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন ভিশন ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১। এর সঙ্গে আরও আছে শতবর্ষ ব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান। আর এ ভিশনগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করতে সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। অর্থাৎ, প্রথমে বঙ্গবন্ধু এসে আমাদের দেশটা দিয়ে গেলেন তারপর তার মেয়ে শেখ হাসিনা দেশকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিলেন, এবং শেষে তার নাতি এই উদ্যোগটা বাস্তবায়ন করলো। আর এ খাতে জুনায়েদ আহমেদ পলক স্যারের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও কাজ এগিয়ে নিয়েছে দেশের সর্বস্তরের জনগণ।
আরো পড়োঃ
কপিরাইট এবং পাইরেসি সম্পর্কে সকল কিছু
ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন:
দেশকে যখন ডিজিটাল ঘোষণা করা হয়েছে তাহলে দেশে প্রযুক্তির ছোঁয়া অনেকটাই লেগেছে। আজ আমাদের রয়েছে নিজস্ব একটি স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এলিট গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখন আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ 'ও উৎক্ষেপণ এর পরিকল্পনা চলছে।
বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবল SEA-ME-WE-4 এবং SEA-ME-WE-5 এর সাথে। যার কারণে ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ৯ লক্ষ, বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি। এথেকে বোঝাই যায় দেশ কতটা উন্নত হয়েছে।
আগে যেখানে কোনো সরকারি সেবা গ্রহণ করতে ২-৩ মাস সময় লেগে যেত, এখন সেবাগুলো মাত্র ৭ দিন বা তারও কম সময়ে পাওয়া সম্ভব হয়। কেননা বর্তমানে প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেম। ঘরে বসে কেনাকাটা করা যাবে একথা '০৮ এর দিকে কি চিন্তা করা যেত? কিন্তু এখন সেটি একটি সাধারণ ব্যাপার। ই-কমার্স এর মাধ্যমে সেটি করা খুবই সহজ। বাস বা ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাচ্ছে টিকিট কাউন্টারে না গিয়ে ই-টিকেটিং ব্যাবস্থার মাধ্যমে। তোমার হাতের মুঠোয় টাকা আছে কিন্তু তা কেউ দেখছে না..!! এমনই মজার ঘটনা সম্ভব হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। আগে যেখানে কাগজের পত্রিকা সংগ্রহ করে পড়া লাগতো, এখন হাতের ছোঁয়ায় খুলে যাচ্ছে সম্পূর্ন পত্রিকা অনায়াসে। লাইনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির বিল প্রদানের মত বিরক্তিকর কাজ হয়ে উঠেছে এখন আনন্দদায়ক অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে। এমনকি এখন চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে যেটি টেলিমেডিসিন নামে পরিচিত। এছাড়াও দেশ ডিজিটাল হওয়ার কারণে করোনা মহামারীর সময়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আগে যেখানে পরীক্ষার ফলাফল হতে পেতে সময় লেগে যেত ২-৩ সপ্তাহ এখন নিমিষেই তা পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া দেশে এখন স্থাপিত হয়েছে ২৮ টি হাইটেক ও আইটি পার্ক। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে লক্ষ লক্ষ বেকার। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো লাভজনক কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছে অনেক যুবক - যুবতী। স্থাপিত হয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি ইত্যাদি। যে কারণে এখন আমরা চিন্তা ভাবনা করছি ভার্চুয়াল জগতের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও রোবোটিক্স নিয়ে।
এত কিছু অর্জনের পরে অবশ্যই আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে অনেক দূর। মাননীয় প্রধামন্ত্রীকে স্যালুট তার এই অসাধারণ উদ্যোগের জন্য।
আশা করি তোমাদের সম্পূর্ন পোস্ট ভালো লেগেছে। এই পোস্টটি তোমরা রচনা আকারে লিখতে পারো, বক্তৃতার ক্ষেত্রেও এসব তথ্য কাজে লাগাতে পারে। পোস্টের কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানিয়। এরকম আরো তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট পেতে ঘুরে দেখতে পারো সাইটটি। আর তোমাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিও অবশ্যই, যেন তারও উপকৃত হতে পারে। আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থেকো।
আমরা ভালো থাকবে - দেশকে ভালো রাখবো
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন