দেশের অন্যতম বড় হুমকি এখন জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশে বসবাসকারী শিক্ষিত মহলের অবশ্যই এ বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে আমাদের জীবনযাপনের রীতিনীতি কেমন হওয়া উচিত তাও নির্ধারণ করা আবশ্যক। আসলেই কি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যাপক ঝুঁকিতে পড়বে? যাইহোক, আমরা এই আর্টিকেল এ মূল বিষয়টি সম্পর্কে মাধ্যমিক ধারণা অর্জনের চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। আর্টিকেলটি মূলত মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। তবে সবাই পড়তে পারবে পুরো বিষয়টি।
এবার মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাকঃ
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হচ্ছে "জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ"। বিষয়টিকে সামনে রেখে জলবায়ু কি, এবং জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে ঘটে এসব সম্পর্কে জেনে নেব। তাহলেই দেখবে সামগ্রিক অবস্থাটা বুঝতে অনেক সুবিধা হবে।
Table of contents
জলবায়ু কাকে বলেঃ
কোনো নির্দিষ্ট বৃহৎ অঞ্চলের অনেক দীর্ঘ সময়কালের গড় আবহাওয়াকে ওই অঞ্চলের জলবায়ু বলে। বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী সময়কাল টা ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ৩৫ অথবা ৪০ বছরের গড় আবহাওয়াকেই জলবায়ু ধরা হয়।
যেমনঃ যদি বলা হয়, একটি দেশের জলবায়ু উষ্ণ। তাহলে বুঝতে হবে ওই দেশটিতে বিগত ৩০/৪০ বছর যাবৎ গরম আবহাওয়া বিরাজ করে।
সঙ্গাতে বলা হয়েছে, জলবায়ু হচ্ছে আবহাওয়ার গড়। অর্থাৎ জলবায়ু আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাহলে আবহাওয়ার উপাদানগুলোই মূলত জলবায়ুর উপাদান।
জলবায়ুর দ্বারা আন্দাজ করা যায় কোনো অঞ্চলে যেকোনো সময় কেমন আবহাওয়া হতে পারে!
বাংলাদেশের জলবায়ু কেমন:
পৃথিবীর প্রতিটি দেশের জলবায়ু সাধারণত তার ভৌগলিক অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন। বাংলাদেশও এর বিকল্প নয়। বাংলাদেশের জলবায়ুকে ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু বলা হয়। আর এ ধরনের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ উষ্ণ, আর্দ্র যা সমভাবাপন্ন। অর্থাৎ এ জলবায়ু গরম কিন্তু অত্যধিক না, শীতল তবুও অত্যধিক না। আর এ অবস্থাকে আমরা নাতিশীতোষ্ণ বলে সম্বোধন করে থাকি। দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়। যার দরুণ দেশে তৈরি হয় নানা মৌসুম অর্থাৎ ঋতু সমুহ।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান
উত্তর অক্ষরেখা | পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা |
---|---|
২০°.৩৪′ থেকে ৩৬°.৩৮' | ৮৮°.০১' থেকে ৯২°.৪১' |
জলবায়ু পরিবর্তন কিঃ
একটি অঞ্চলের গড় আবহাওয়ায় যখন আগের তুলনায় পরিবর্তন দেখা যায় তখন বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। আসলে জলবায়ু একদিনে পরিবর্তিত হয় না। এত দীর্ঘ সময়ের গড় বলে, প্রতিবছরই জলবায়ুতে খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। ব্যাপক হারে আবহাওয়ার উপাদানগুলোতে পরিবর্তন আসলে জলবায়ু অনেক তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হতে পারে।
তবে বর্তমানে অনেক তাড়াতাড়ি জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। যা মোটেও কোনো ভালো খবর নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Climate change.
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনঃ
বর্তমানের অনেকটা আলোচিত বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশও যেন পাল্লা দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। মাত্র দুই/তিন দশক আগেও বাংলাদেশের জলবায়ু যেমন ছিল, এখনওকি তেমনি রয়েছে? - না, পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই। পূর্বের তুলনায় এখন অনেক আগেই শীত এসে যাচ্ছে এবং স্থায়িত্বও হচ্ছে অনেক কম। আবার এখন হয়তো আগের মতো স্বাভাবিক গরম আর পাওয়া যাচ্ছে না। পূর্বের ন্যায় বৃষ্টিপাত বোধহয় কিছুদিন পর আর দেখা যাবে না!
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটুকু তা সম্প্রতি অনেকেই বুঝতে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জনজীবন পড়ে যাবে হুমকির মধ্যে।
যেমন: নেপালের জলবায়ু যদি পরিবর্তিত হয়ে যায়। অর্থাৎ সেখানে যদি আর্দ্র জলবায়ুর পরিবর্তে উষ্ণ জলবায়ু চলে আসে তাহলে, মাউন্ট এভারেস্ট এর বরফ গলে যাবে। তারপর সেই বরফ গলা পানি চলে আসবে সাগরে। এবং সাগরের পানির স্তরের উচ্চতা বেড়ে যাবে। ফলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল গুলো প্লাবিত হবে।
দুঃখের বিষয় যে, এই উদাহরণটি এখন আর একটি উদাহরণ নয়। একদম বাস্তবে রূপ নিয়েছে। যেটি বিশ্বের জন্য খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ
বাংলাদেশ যেন আলোচ্য সমস্যাটির ফলাফল ক্ষেত্র! এর সকল প্রভাবই যেন এখন আমাদের দেশটিতেই পড়ছে। বাংলাদেশ একটি সমুদ্র উপকূলীয় দেশ। এ কারণে আমাদের সাফারিংস্ অনেক বেশি। প্রথমত উষ্ণ জলবায়ুর প্রভাবে বরফগলা পানি সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি করে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। পিএনএএস এর তথ্যমতে সমদ্রুতিতে এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকেই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে প্রায় ৩.৩ ফুট। এতে করে তলিয়ে যেতে পারে উপকূলীয় অঞ্চল সমুহ।
এছাড়া যেসব প্রভাব ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
বাংলাদেশের কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ
একটি নির্দিষ্ট জলবায়ুতে নির্দিষ্ট কিছু ফসল ফলানো সম্ভব হয়। কিন্তু জলবায়ুতে যদি পরিবর্তন আসতে শুরু করে তাহলে এরকম ফসল আর ফলানো যায় না।
বাংলাদেশ একটি সমভাবাপন্ন জলবায়ুর দেশ। এখানে প্রধানত ধান, গম, পাট ইত্যাদি ফসল ফলানো যায়। কিন্তু জলবায়ু অনেকটা শীতল হয়ে গেলে ধান বা গম কিন্তু আর তেমন পরিসরে চাষ করা যাবে না।
আবার সেই বরফ গলা পানি নদী বয়ে যাওয়ার সময় উপচে পড়ে বন্যা সৃষ্টি করে ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসল পানিতে ডুবে যাচ্ছে এরকম ঘটনাও বর্তমানে ঘটতে শোনা যাচ্ছে। শিলা বৃষ্টিও ফসলের অনেক ক্ষতি করে থাকে। আর এসব দুর্যোগ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়ে থাকে।
শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংগঠিত হচ্ছে নানা প্রকারের প্রাকৃতিক দূর্যোগ। আর এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই শিশু। জলবায়ু জনিত কারণে তাদেরও ভুগতে হচ্ছে নানা অসুখ বিসুখে। ইউনিসেফের এই আর্টিকেলে তা বর্ণনা করা হয়েছে। ক্লিক
[এই পোস্টের বিভিন্ন তথ্য wikipedia থেকে নেওয়া হয়েছে। আমাদের সকল ছবি Canva দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে]
আশা করি তোমরা এ সম্পর্কে মূল ধারণাটি পেয়েছো। বিষয়টি আসলে অনেক সহজ। তবে অনেক শিক্ষার্থী বিষয়টিকে জটিল করে ফেলে। তোমাদের একবার পড়ে বুঝতে অসুবিধা হলে কষ্ট করে আরেকবার পড়ে নাও, সহজেই বুঝে যাবে। আর এবিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানাও। ইনশাল্লাহ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ভালো লাগল বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারো। এরকম আরো তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট পেতে ঘুরে দেখতে পারো পুরো সাইট। আজ এই পর্যন্তই। আসসালমুআলাইকুম।
আমরা ভালো থাকবো - দেশকে ভালো রাখবো
জলবায়ু কাকে বলে?
কোনো নির্দিষ্ট বৃহৎ অঞ্চলের অনেক দীর্ঘ সময়কালের গড় আবহাওয়াকে ওই অঞ্চলের জলবায়ু বলে।
বাংলাদেশের জলবায়ু কেমন?
বাংলাদেশের জলবায়ুকে ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু বলা হয়।
কয়েক দশকেই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা কত বেড়ে যেতে পারে?
কয়েক দশকেই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে প্রায় ৩.৩ ফুট।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার কত ভাগ শিশু?
৪০ ভাগ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন